হলোফিরা হাতুনের জিবনী
হলোফিরা হাতুনের জিবনী
হলোফিরা হাতুন-সুলতান উরহান গাজীর প্রথম স্ত্রী
ইতিহাস উসমানীয় সুলতান ও উসমানীয় সুলতানদের স্ত্রীদের গল্পে পূর্ণ। এই মহান সালতানাতের অন্তর্গত প্রতিটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। শত শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে আছে এই চরিত্রগুলো এবং দর্শকরা তাদের জিবনী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
কে জানত যে, বাইজেন্টাইন দুর্গে বড় হওয়া রাজকন্যা ভবিষ্যতের মহান সুলতান জন্ম দেবে? এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতানের মা হবার মর্যাদা পাবে। সে এক সময় বাইজেন্টাইন রাজকন্যা ছিলো, শুনে অবাক হলেও এটিই সত্য, হলফিরা হাতুনের কথা বলছি। যিনি ইয়ারহিসার টেকফুরের কন্যা হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছেন। আমরা নীলুফার হাতুনকে মহান ওরহান গাজীর স্ত্রী এবং সুলতান প্রথম মুরাদের মা হিসেবে জানি। নীলুফা হাতুনের আসল নাম হলোফিরা হাতুন ছিল।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের মহান ইতিহাসবীদ আসিকপাসাজাদের মতে, নীলুফা হাতুন ছিলেন, ইয়ারহিসার টেকফুরের কন্যা। হলোফিরা নামও বলা হয়েছে এবং অলিভেরা হলোফিরাও বলা হয়েছে। এটি তার বাইজেন্টাইন নাম। এবং মুসলিম হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছিল নীলুফা হাতুন। এমন কোন ঘটনা ইতিহাসে নেই যা তার প্রাথমিক জীবনের আলোকপাত করেছে।
ইতিহাস অনুযায়ী, তার মা শৈশবে মারা যায়, কিন্তু আসল ঘটনা শুরু হয়, যখন উসমানীয়রা মহান বাইজেন্টাইন দুর্গ বিলেজিক জয় করে। এই ঘটনাটি ইতিহাসে দারুনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং সেখানেই হলফিরার ভূমিকা এসেছে।
হেলোফিরার বাবা তার মেয়েকে বিলেজিক টেকফুরের সাথে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। যাতে তার বাবার রাজনীতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। কিছু ক্ষেত্রে, হলোফিরা বিলেজিকের টেকফুরের সাথে বাগদান করেছে বলে জানা যায়। তবে কিছু জায়গায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, তিনি বিলেজিকের টেকফুরের ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, বাইজেন্টাইন টেকফুরেরা উসমান বেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানন, এবং তারা উসমান বেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
যা মিহালের কোসেসর সাহায্যে ব্যর্থ হয়। বিপরীতে, উসমান বে এই দুটি মহান বাইজেন্টাইন দুর্গ বিলেজিক এবং ইয়ারহিসার জয় করেন। এবং তাদের টেকফুরদের হত্যা করেন। উসমান বে হোলোফিরাকে সেখান থেকে গনীমত হিসাবে নিয়ে আসেন। এবং ওরহান গাজীর সাথে তার বিয়ে দেন। এটা উসমানীয় ইতিহাসের অনেক বইতে লিপিবদ্ধ আছে।
কিন্তু কোন বাইজেন্টাইন ইতিহাসবিদ এই ঘটনার উল্লেখ করেনি যে, তাদের রাজকন্যা বন্দী হয়েছিলো যুদ্ধে। তবে হলোফিরার উজ্জ্বল ভবিষ্যত ছিল এবং ওরহান গাজীর পুত্রদের জন্ম দেওয়ার মতো বড় সৌভাগ্য ছিল। নীলুফার ছিলেন প্রথম বাইজেন্টাইন মহিলা যিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরিবারের অংশ হয়েছিলেন।
এটি ইতিহাসে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে নীলুফার হাতুন ছিলেন সুলতান মুরাদ-১ এর মাতা। এর পরে কিছু ঘটনা লেখা হয়েছে, যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, কাসিমও ওরহান গাজী ও নীলুফার হাতুনের ছেলে। যিনি অল্প বয়সে মারা যায়। ওরহান গাজীর ছেলে সুলাইমান পাশার মাকে নিয়ে একটু মতবিরোধ আছে।
কিন্তু জোরালো প্রমাণ আছে যে, তিনিও নীলুফার হাতুনের পুত্র ছিলেন। তিনি ছিলেন ওরহান গাজীর প্রথম সন্তান। এবং সুলাইমান পাশা মুরাদ প্রথম থেকে প্রায় দশ বছরের বড় ছিলো। তবে ওরহান গাজী ও নীলুফার হাতুনের বিবাহের বিবরণ নেই।
কিন্তু কিছু ইতিহাসবিদদের অনুসারে, বেলেজিক এবং ইয়ারহিসার বাইজেন্টাইন দুর্গ জয়ের পর, বাইজেন্টাইন রাজকুমারী হলোফিরাকে উসমান তার সাথে নিয়ে যান। এর পরে কারাজাহিসার দূর্গে একটি জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন করা হয় এবং রাজকুমারী হলোফিরা ওরহান গাজীকে বিয়ে করেন। এই সময়েই তিনি মুসলিম হন এবং তার নাম পরিবর্তন করে নিলুফার হাতুন রাখা হয়।
ইবনে বতুতাও তার বইতে নীলুফার হাতুনকে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তিনি নীলুফার হাতুনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছিলেন। তিনি নীলুফার হাতুন সম্পর্কে লিখেছেন যে, তিনি ওরহান গাজীর বিশেষ ভালোবাসার হাতুন ছিলেন। ইবনে বতুতা তাকে উসমানীয় মা হিসাবেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ঠিক একই নাম ইজনিকের রান্নাঘরে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে তিনি গরীবদের জন্য খাবার তৈরি করতেন।
ইবনে বতুতা লিখেছেন, নীলুফার হাতুন তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ওরহান গাজীর সাথে বুরসায় কাটিয়ে দেননি। পক্ষান্তরে, ওরহান গাজী যখন তাঁর মহান বিজয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তখন নীলুফার হাতুন কল্যাণমূলক কাজে সক্রিয় অংশ নিতেন। এবং সেই সময়ে তিনি ইজনিক-এ থাকতেন কিন্তু কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এই দূরত্বের পরে তিনি ওরহান গাজীর সাথে তাদের হারেমে গিয়েছিলেন। তিনি তার অন্যান্য স্ত্রীদের সাথেও সময় কাটিয়েছেন।
ইবনে বতুতা নিজেই লিখেছেন যে, ওরহান গাজীর স্ত্রী এই জরাজীর্ণ শহর ইজনিকেই বসবাস করছিলেন। কিন্তু সুলতানের অনেক লোক এই গুণী মহিলার অধীনস্থ ছিলেন, ইবনে বতুতা আলাউদ্দিনের সাথে অতিথি হিসাবে অবস্থান করেছিলেন। ইবনে বতুতাও আলাউদ্দিনের সাথে এই মহান রাণীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
তিনি তার দয়ার জন্য খুব বিখ্যাত ছিলো। তিনি একই এলাকায় বিচারক হিসাবেও কাজ করেছিলেন। ইবনে বতুতা বলেছেন যে, তিনি সেখানে থাকাকালীন মহান ওরহান গাজীও তার স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন। নীলুফার হাতুন পরোপকারে খুব আগ্রহী ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
বিখ্যাত ঐতিহাসিক আসিকপাসাজাদে তার কাজগুলি খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন যে, নীলুফার হাতুন বুরসা যাওয়ার পথে নদীর উপর একটি সেতু তৈরি করেছিলেন। দরবেশদের জন্য দরগাহ নির্মাণ করেছিলেন। বুরসাতে একটি মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন। নিলুফার হাতুন গরীবদের খাওয়ানোর জন্য রান্নাঘরটি তৈরি করেছিলেন, যাকে জাভি-ই-নিলুফার হাতুন বলা হয়।
এই দাতব্য সংস্থার অনেক সেবকও ছিলেন, যারা খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন এবং তিনি রাজ্যের মহান সেবকদের মধ্যে গণ্য হন। একটি মহান রাজ্যের জননী হওয়া সত্ত্বেও, নীলুফার হাতুন খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার ছেলে মুরাদ উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তার সম্মানে তার মায়ের নামে ইজনিকে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
নিলুফার হাতুন তার জীবনে অনেক ভাল কাজ করেছিলেন। নিলুফার হাতুনের নামেও বুরসার একটি শহরের নামকরণ করা হয়েছিল। যার গল্প শুরু হয়েছিল, একজন বাইজেন্টাইন রাজকন্যা হিসাবে এবং শেষ হয় একজন উসমানীয় মা হিসাবে। তার জীবন খুব আকর্ষণীয় ছিল।
নীলুফার উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম মা যার কনিষ্ঠ পুত্র মুরাদ প্রথম উসমানীয় রাজ্যের শাসক হন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুলাইমান পাশা তার যৌবনে ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যান। হলোফিরা বা নিলুফার হাতুনের জন্ম সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। কারণ তিনি বাইজাইন্টাইনের একজন হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। যা নিয়ে উসমানীয় কোন ইতিহাসবিদ কিছু লেখেনি। এবং বাইজাইন্টাইন ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিছু পাওয়া যায় না। কারণ তিনি একজন সাধারণ টেকফুরের মেয়ে ছিলেন। আমাদের সমর্থন করতে ভিজিট করতে পারেন
কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে লেখা আছে যে তিনি ১৩৮৩ সালে ইন্তেকাল করেন। এবং সে সময় তিনি প্রায় ৯৯ বা ১০০ বছর বয়সী হয়েছিলেন। নীলুফার হাতুনকে ওরহান গাজীর পাশে বুরসায় সমাহিত করা হয়।