Real history

আল আকসা মসজিদের ইতিহাস, বিভিন্ন নাম, উদ্ধার-পুনউদ্ধার ও অন্যান্য

আল আকসা মসজিদের সঠিক ইতিহাস ও ঘটনাপ্রবাহ

মসজিদে আক্বসা:  হক- বাতিলের দ্বন্দ্ব পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকেই চলে আসছে। এই দ্বন্দ্ব কখনো হয়েছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে, কখনো হয়েছে কলমের মাধ্যমে, কখনো হয়েছে ক্ষমতার মাধ্যমে, কখনো হয়েছে যুদ্ধের মাধ্যমে। কিন্তু,  এমন একটা ইস্যু আছে, যেখানে হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব শুরু থেকে আজ অবধি শুধু যুদ্ধের মাধ্যমেই হয়ে আসছে। রক্তে -রঞ্জিত সেই ইতিহাসের পাতাগুলো, চলুন তাহলে জেনে নিই, কী সেই ইস্যু? এবং কী সেই ইতিহাস?

  গোড়ার কথা: মসজিদে আক্বসা সম্পর্কে জানতে হলে আগে জেরুজালেম শহরকে জানতে হবে। জেরুজালেম একটি পাহাড়ি এলাকা। এর চারিদিক পাহাড়ে বেষ্টিত। পাহাড়গুলোর মাধ্যে উল্লেখযোগ্য পাহাড় হলো: ১.মোরিয়া পাহাড় ২.যাইতুন পাহাড় ৩.সাহ্ইউন পাহাড়  ৪.আকরা পাহাড়  ৫.যাইতা পাহাড়  ৬.গাওল পাহাড় 

মসজিদে আক্বসা
আল আকসা মসজিদের ভিতরের দৃশ্য

খ্রীস্টপূর্ব ৩০০ সালে আরবের ইয়াবুসি গোত্রের শাসক “মালিক সাদেক” জেরুজালেম শহর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেন।  এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি শহরটি নির্মাণও করেন, এবং তাদের রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। ইয়াবুসি গোত্রের লোকেরা জেরুজালেমে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করা শুরু করে। আস্তে আস্তে শহরের প্রসিদ্ধি দিগ্বিদিক ছড়াতে শুরু করলো। সেখান থেকেই জেরুজালেম শহরের সূচনা হয়।

আবহওয়া: জেরুজালেমের আবহাওয়া মাঝারি ধরণের। শীত ও গ্রীষ্ম বাদ দিয়ে অন্যান্য সময় সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৮  সেন্টিগ্রেড থাকে সেখানকার  ফসল,গাছ-পালা এবং কৃষি জমিগুলো ভূমধ্যসাগরের আবহাওয়া ভোগ করে। জানুয়ারী মাসে সর্বাধিক ঠান্ডা পড়ে তখন তাপমাত্রা থাকে ৯.৭ সেন্টিগ্রেড। পক্ষান্তরে আগস্ট মাসে সর্বাধিক গরম পড়ে  তখন তাপমাত্রা থাকে ২৫ সেন্টিগ্রেড। শীতকালে  সর্বনিন্ম তাপমাত্রা থাকে ৪ সেন্টিগ্রেড 

জেরুজালেম শহরের বিভিন্ন নাম: মুসলমানদের নিকট জেরুজালেম শহর “আল কুদস” নামেই সর্বাধিক পরিচিত। কুদস শব্দের অর্থ হচ্ছে “পবিত্র”। খ্রীস্টপূর্ব ৩০০ হাজার সালে ইয়াবুসি গোত্রের শাসক মালিক সাদেক যখন জেরুজালেম শহরটি নির্মাণ করেন, তখন তিনি এর নাম রাখেন “ইউরোসালেম” এটি একটি কেনানি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে “শান্তিপ্রিয় “। শাষক মালিক সাদেক নাকি খুবই শান্তিপ্রিয় ছিলেন, তাই শহরটির নাম “ইউরোসালেম” রাখা হয়। আর সেখান থেকেই আজকে আমরা জেরুজালেম বলি। 

জেরুজালেম শহরের আরো অনেকগুলো নাম আছে: ১. মদিনাতুল হক( সত্যের শহর) ২. মদিনাতুল্লাহ ( আল্লাহর শহর)  ৩.মদিনদতুল মুকাদ্দাসাহ ( পবিত্র শহর) ৪. মদিনাতু-ত্বাহেরাহ( পবিত্র শহর) 

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইয়াকূত হামাওয়িতার আল মু’জামুল বুলদান গ্রন্থে এর আরেকটি নাম উল্লেখ করেছেন তাহলো “আল- বালাত” যার অর্থ হচ্ছে ” রাজপ্রাসাদ  

মসজিদে আক্বসার  বিভিন্ন নাম: আক্বসা অর্থ হচ্ছে “দূরবর্তী”। মক্কা থেকে মে’রাজের সূচনা হয়৷ এবং পবিত্র কুরআন ক্বারীমে মে’রাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম “আক্বসা” শব্দটি ব্যবহার হয়। সম্ভবত মক্কা থেকে আক্বসার দূরত্ব বেশী হওয়ায় আক্বসা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মসজিদে আক্বসার আরো অনেকগুলো নাম আছে  ১. আল-কুদস ২. মসজিদে ইলিয়া ৩. মসজিদে সালাম ৪. মসজিদে উরুশলেম ৫. মসজিদে ইয়াবুস

মসজিদে আক্বসার নির্মাণ ও সংস্করণ: প্রথম নির্মাণ,  অনেকে মনে করেন যে সর্বপ্রথম  কা’বা শরিফ হযরত ইবরাহিম আ: এবং মসজিদে আক্বসা হযরত সুলাইমান আ: নির্মাণ করেন যা একটি ভুল ধারণা। কেনোনা হযরত আবু যর গিফারি (রা:) একবার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন যে মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আক্বসার মধ্যে কতো বছরের ব্যবধান।  তিনি বললেন, ৪০ বছর৷ 

অথচ হযরত ইবরাহিম আ: এবং হযরত সোলাইমান আ: এর মাঝে এক হাজার বছরের ব্যবধান।  এখানে সর্বসম্মত মত হচ্ছে কা’ বা শরীফ হযরত আদম আ: নির্মাণ করেন এবং এরপর উনার বংশধরেরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক’বা শরীফ নির্মাণের ৪০  বছর পর উনার বংশের কেউ মসজিদে আক্বসা নির্মাণ করেন৷ 

দ্বিতীয় পুনঃনির্মাণ, উপরের বক্তব্য দ্বারা প্রশ্ন আসে যে ইতিহাসে লিখা আছে যে, মসজিদে আক্বসা নির্মাণ করেন হযরত সোলাইমান আ: – এ প্রশ্নের  উত্তরে আল্লামা ইবনুল জাওযি রহ: বলেন আসলে হযরত ইবরাহিম আ: এবং হযরত সোলাইমান আ : এ দু’জন ছিলেন পুন:নির্মাণকারী। প্রথম নির্মাণকারী নয়।

 হযরত সোলাইমান আ: এর  মসজিদে আক্বসা পুন:নির্মাণের জন্য জিনদের আদেশ দিলেন। জিনরা ছিলো খুবই দুষ্ট প্রকৃতির।, তারা সুযোগ খুঁজতো কিভাবে পলায়ন করা যায়।  তাই হযরত সোলাইমান আ: লাঠির উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন হে আল্লাহ!  তুমি আমার মৃত্যু গোপন রাখো”, আল্লাহ তায়ালা তিনার দোয়া কবুল করলেন,এবং তিনি জীবিত অবস্থায় যেভাবে দাড়িয়ে ছিলেন মৃত্যুর পরেও আল্লাহ তায়ালা সেভাবে রাখেন। জিনেরা একবছর পর্যন্ত লাগাতার কাজ করে মসজিদে আক্বসার পুন:নির্মাণ করে। 

 যদি কোনো জিন হযরত সোলাইমান আ: এর অবাধ্য হয়ে চলে যেতে চাইতো, সে জ্বলে যতো৷ কাজ শেষ হওয়ার পর এক জিন হযরত সোলাইমান আ: অনুমতি ছাড়া চলে যেতে চাইলো। কিন্ত সে জ্লে যাইনি।  জিনটি খুবই আশ্চর্য হলো। সে বারবার  আসা যাওয়া করলো কিন্তু সে জ্বলেনি। তখন জ্বিনটি বুঝতে পারলো যে, হযরত সোলাইমান আ: মৃত্যু বরণ করেছেন।  

ততক্ষণে, মসজিদে আক্বসার নির্মাণ কাজ সম্পুর্ণ হয়ে গলো। এরপর সকল জ্বিন চলে গলো। হযরত সোলাইমান আ:  যে লাঠিতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন সেই লাঠির সুন্দর একটি ঘটনা আছে। ঘটনাটি দুর্বল রেওয়াতে হাদীসেও বর্ণিত আছে।

ঘটনাটি হলো হযরত সোলাইমান আ: যখনই নামাযে দাড়াতেন তখন তাঁর সামনে একটি গাছের চারা দেখতেন তিনি চারাকে জিজ্ঞেস করতেন “তোমার উদ্দেশ্য  কি”? যদি রোপণ করা উদ্দেশ্য হতো। তাহলে, তিনি রোপণ করে দিতেন। আর যদি ঔষধ উদ্দেশ্য হতো তাহলে তিনি আলাদাভাবে সেটার যত্ন নিতেন। একদিন একটি গাছকে জিজ্ঞেস করলেন ” তোমার উদ্দেশ্য কি”? গাছটি বলল, মসজিদ ধ্বংস করা আমার উদ্দেশ্যে। হযরত সোলাইমান আ: বললেন, না বরং আমি তোমার উপর মৃত্যু বরণ করবো। আর এরপর মসজিদ ধ্বংস হবে। 

মসজিদে আক্বসার বর্ণনা: মসজিদে আক্বসার বর্তমানে যে চার দেয়ালের মাঝে বেষ্টিত তার জয়াগার আয়তন হচ্ছে এক  লক্ষ চল্লিশ হাজার নয়’শ বর্গমিটার। এই চার দেওয়ালের ভিতরে মোট চারটি মসজিদ রয়েছে। ১. মসজিদে আক্বসা  ২. মসজিদে সাখরা  ৩. মসজিদে উমর ৪. মসজিদে নিসা. 

মসজিদে সাখরা মসজিদে আক্বসার থেকে ৫’শ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত । মসজিদে প্রবেশের মোট ১১টি দরজা রয়েছে।  উত্তর দিক থেকে মসজিদে আক্বসায় প্রবেশ করতে গেলে প্রথমে বিরাট বারান্দা পড়ে সেখান মসজিদে প্রবেশের মোট ৭ টি দরজা আছে। আর পূর্ব দিকে ১ টি এবং পশ্চিম দিকে ২ টি এবং দক্ষিণে ১ টি  দরজা রয়েছে। মহিলাদের নামাজের জন্য পৃথক জায়গা রয়েছে। মসজিদের অনেকগুলো স্তম্ভ আছে। যেগুলোর মধ্যে সুন্দর করে নকশা অঙ্কন করা হয়েছে। 

উত্তর- পশ্চিমে রয়েছে মনোরম নকশা খচিত মেহরাবে- যাকারিয়া। মসজিদে আক্বসায় অনেকগুলো গম্বুজ রয়েছে উল্লেখযোগ্য হলো যেমন: ১. সিলসিলাহ গম্বুজ। ২.শেখ খলিল গম্বুজ। ৩. সোলাইমান গম্বুজ। ৪. নাহইওয়া গম্বুজ। ৫ খিদির গম্বুজ।  ৬. মেরাজ গম্বুজ। ৭ মূসা গম্বুজ। ৮.  ইউসুফ গম্বুজ। ৯.  মেহরান্নবী গম্বুজ। 

মসজিদে আক্বসার সুউচ্চ ও সুন্দর কয়েকটি মিনার রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো যেমন: ১. বাবুল আসবাত মিনারা। ১.বাবুল মাগারেখা মিনারা। ৩. বাবুস সিলসিলাহ মিনারা এবং অজু- ইস্তিঞ্জার সুন্দর ব্যবস্হা রয়েছে। 

আল-আক্বসাকে  হারানো এবং পুনরুদ্ধার করা: সর্বপ্রথম মসজিদে আক্বসা ধ্বংস করে রাজা নেবুচাঁদ যা খ্রীস্টপূর্ব ৫৮৬ সালের ঘটনা। এরপর পারস্যের গভর্নর জেরুবাবেল এটাকে পুনঃনির্মাণ করে। ৩১৫ সালে রোমানরা এটাকে ময়লা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতোএবং ইহুদিরাও পবিত্র স্হান মনে করতোনা। খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালে রাজা “হেরোড দ্য গ্রেট” “ওয়েস্টার্ন ওয়াল” নির্মাণ করেন।  

এরপর ধ্বংস করে বুখতে নসর। বনি ঈসরাইল যখন পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর তিনটি আজাব দিয়েছিলেন।  যা সূরা বনী ইসরাইলে উল্লেখ আছে।  তার মধ্যে একটি হচ্ছে বনী ইসরাঈলকে ধ্বংস করা হবে। বুখতে নসর পুরো জেরুজালেম মসজিদে আক্বসা সহ জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়। এখানে একটি মজার তথ্য আছে, 

[বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক তবে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর  সাথে সম্পর্কিত বলে না লিখে পারলামনা]>সেটা হচ্ছে বুখতে নসর যখন সব জায়গায় তান্ডব চালাচ্ছিলো তখান সেখানে আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ ( সা:) এর  পূর্বপুরুষ “মা’আদ” ছিলেন তাঁর বয়স ছিলো ১২ বছর। তাই আল্লাহ তায়ালা ঐ সময়ের নবী হযরত আরমিয়া (আ:) কে আদেশ দিলেন যাতে তিনি তাকে নিয়ে মক্কার দিকে চলে যায়।

তো যাইহোক, এরপরে খ্রীস্টপূর্ব ৭০  সালে খ্রিস্টানরা এটাকে ময়লা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে। হযরত উমর (রা:) তা পুনরুদ্ধার করেন। এবং ময়লা ফেলার জায়গাকে পরিস্কার করে সেখানে কাঠের একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর ৬৯১ সালে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান এটি পুনঃসংস্করণ করেন। যা আজ অবধি টিকে আছে। ১৫০০’শ বছর পরেও সেটা ঝলমল করছে। মনে হচ্ছে যেনো গতকালই নির্মাণ করা হয়েছে। 

মসজিদে আক্বসা
মসজিদে আক্বসা

এরপর আবার খ্রিস্টানরা মাথাচাড়া  দিয়ে উঠে। তারা ক্রুসেড শুরু করে, যার মানে হচ্ছে ধর্মযুদ্ধ । ১০৯৬ সালে প্রথমবার ক্রুসেডের জন্য ডাক দেয় পোপেরা। ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালি এই ডাকে সাড়া দেয়। যাদেরকে আরবরা একনামে “ফ্রাঙ্কিস” বলে ডাকতো। 

কনস্ট্যান্টিনোপলের সম্রাট আ্যলেক্সিস যখন পোপের হাতে শপথ করে যে, তারা পবিত্র ভূমি জেরুজালেম উদ্ধার করবে তখন সে ক্রুসেড সমর-নায়কদের থেকে শপথ নেন এর সাথে তাদের এটাও প্রতিশ্রুতি দেন যে, যে সেনাপতি  যে এলাকা দখল করবে ঐ এলাকা তার হয়ে যাবে। বাস্ শুরু হয় এক নতুন  বর্বরতা। ৭০ হাজার বা অধিক সৈন্য নিয়ে  তারা যুদ্ধ করতে করতে জেরুজালেমের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

ঐ সময়ে জেরুজালেমের শাসক ছিলো ফাতমীয় গভর্নর ইফতিখার আদ-দুলা।  ঐতিহাসিকদের মতে থখন তার সাথে জেরুজালেমে মাত্র সহস্রাধিক সৈন্য আর চার’শ অশ্বারোহী ছিলো। শেষে ১০৯৯ সালের ১৫এ জুলাই দীর্ঘ অবরোধের পর তারা জেরুজালেম শহর দখল করে নেয় ।

এভাবেই ৪৭২ বছরের মুসলিম শাসনের পতন ঘটে জেরুজালেমে। শহর দখল করার পর তারা শহরে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়। মসজিদকে গির্জায় পরিণত করে।সেদিন মুসলমানদের রক্তে প্লাবিত হয়েছিলো আল- আক্বসা। খুন,রাহাজানি,ধর্ষণ কোনো কিছুই বাদ যায়নি ক্রুসেড সৈন্যদের থেকে। আবাল,বৃদ্ধ,বণিতা,মহিলা এবং শিশু কেউই রক্ষা পায়নি তাদের হাত থেকে। এমনকি তারা ইহুদিদেরও হত্যা করে। 

ইতিহাসের মহানবীর সালাউদ্দিন আইয়ুবীর আল- আক্বসা পুনঃরুদ্ধার করা: একজন কাঠমিস্ত্রী বাদামী রংঙের একটি খুব সুন্দর মিনার তৈরী করেছিলো।  মিনারটি এতই সুন্দর হয়েছিলো যে,  সবার মুখে মুখে মিনারটির প্রসংসা শুনা যেতো। অনেকেই সেটি কিনতে চাইতো,কিন্তু কাঠমিস্ত্রীর একটাই কথা!  এই মিনার আমি মসজিদে আক্বসার জন্য তৈরী করেছি। আমি এটা কখনো বিক্রি করবোনা। 

মানুষ লোকটিকে পাগল বলতো। কারণ তারা ভেবেছিলো এখন জেরুজালেম খ্রিস্টানদের হাতে।  মুসলমানরা আর সেটা বিজয় করতে পারবেনা। তাহলে মিনারটি কিভাবে আল- আক্বসায় স্হাপন হবে। একদিন এক বালক তার বাবার সাথে মিনারটি দেখতে এলো। মিনারটি দেখে বালক মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে, অবশ্যই একদিন সে এই মিনারটি মসজিদে আক্বসায় স্হাপন করবে। এবং সেই বালকই ৪০  বছর পর ঐ মিনারটি মসজিদে আক্বসায় স্হাপন করে। যে বালকের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত” মহানবীর সুলতান সালাউদ্দিন আল আইয়ুবী” নামে । 

হিত্তিনের যুদ্ধের পর ক্রুসেডাররা তাদে সাহস হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে সুলতান সালাউদ্দিন  আইয়ুবী তার জানবাজ মুজাহিদদের নিয়ে জেরুজালেমে  চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। এবং ১২  দিন টানা অবরোধের পর মুসলিম সৈন্যরা জেরুজালেমের দেওয়ালে চড়তে সক্ষম হয়। মুসলিম সেনাপতি যখন জেরুজালেমে মুসলমানদের পতাকা উড্ডায়ন করেন তখন তারা বুঝতে পারে যে, শহরের পতন হয়ে গেছে।  খ্রিস্টান মহিলারা তাদের সৈনিকদের উজ্জীবিত করার জন্য মেয়েদের মাথার চুল পর্যন্ত কর্তন করে। কিন্ত মুসলমানরা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জিহাদ করে শহরটি পুনঃরুদ্ধার করে নেয়।  

আল-আক্বসা নিয়ে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র: সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম বিজয় করার পর থেকে ইহুদিরা নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু করে। যা, আজ অবধি বিদ্যমান। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জেরুজালেমকে মুসলমানদের থেকে নেওয়ার চেষ্টা করে।  এমনকি থিওডোর হার্জেল যাকে ঈজরায়েলি রাষ্ট্রের জনক বলা হয়, সে সুলতান আবদুল হামিদ খান থেকে টাকার বিনিময়ে ফিলিস্তিনে জমি কিনতে চেয়েছিলো।

আল আকসা মসজিদের নামাজের দৃশ্য
আল আকসা মসজিদের নামাজের দৃশ্য

সুলতান আব্দুল হামিদ খান ছিলেন রাজনীতিতে দক্ষ একজন শাসক। যার তুলোনা শাসকের সাথে করা যায়না।  ইতিহাসে এমন শাসকের উদাহারণ দ্বিতীয়টি নেই। সুলতান আব্দুল হামিদ খান ছিলেন চতুর লোক। ঘটনাটি আমি সুলতানের দিনলিপি অনুযায়ী বর্ণনা করতেছি:- তিনি থিওডোর হার্জেলকে দেখা করার অনুমতি দিতেন না।

থিওডোর হার্জেল ৬ বছর পর্যন্ত অনুরোধ করার পর তিনি  মাত্র দু’ ঘন্টা সময় দেন। থিওডোর হার্জেল লম্বা এক বক্তৃতা উপস্হাপন করে সুলতানের সামনে। সে ভেবেছিলো সুলতান রাজি হয়ে যাবে। সে প্রস্তাব দিয়েছিলো যদি তাদের কাছে ফিলিস্তিনের একটু জমি বিক্রি করে তাহলে তারা উসমানী সাম্রাজ্যের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দিবে। 

সৈন্যদের নতুন ও আধুনিক অস্ত্র কিনে দিবে। এবং বাড়তি আরো অনেক টাকা দিবে। কিন্তু সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খান সোজা না করে দেন। তিনি বলেন: আল আক্বসা আমার নয় এটা মুসলমানদের রক্তে কেনা জমি। এই জমি আমি বিক্রি করার কোনো অধিকার আমার নেই। তিনি থিওডোর হার্জেলকে অপমান করে বের করে দেন। ইতিহাসের সেই মূহুর্তের দুর্লভ রিয়েল ভিডিও এখনো আছে আমাদের কাছে)।  শুধু আল আক্বসাকে রক্ষা করার কারণে ইহুদিরা সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খানকে এক সময় ক্ষমতাচ্যুত করে।

বর্তমানে আল- আক্বসা এবং আমাদের করণীয়: আল আক্বসা নিয়ে আজ অবধি লড়াই চলছে। মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত  আল আক্বসা। বর্বর ইহুদিদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেনা যেটা লিখার মতোনা বা লিখার প্রয়োজন নেই। সব আমরা নিজের চোখেই দেখতেছি। 

ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের করণীয় হচ্ছে :

১/ সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা সারকারকে জানানো তারা যেনো ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকে 

২/ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে দোয়া।  সবাই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জন্য দোয়া করা।

৩/ ঈজরায়েলি পণ্য বয়কট করে তাদের আর্থিক ক্ষতি করতে হবে।

৪/ গুনাহ ছেড়ে দিয়ে সকল মুসলিম আল্লাহমুখি হওয়া। কারণ মুসলমানদের প্রত্যেক বিপদ তাদের আমলের কারণেই হয়।

“আল্লাহহুম মাহফায্নাল ফিলিস্তিনা মিনাল ইয়াহুদী ওয়ান নাছারা”।

-লেখক: মো: যায়েদ হাসান, ইতিহাস বিষয়ক গবেষক

আরো ইতিহাস পড়ুন

Read articles in English

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button